৫ আগস্ট ২০২৫ - ০৯:০২
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে।

আহলে বাইত (আ.) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা (আবনা): অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন ও ইসরায়েলি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করার দাবিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের ওপর চাপ ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে।



বেশ কয়েকজন অধিকারকর্মী মিডল ইস্ট আইকে বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা ও কূটনীতিকদের বহিষ্কারের দাবিতে তাঁরা তাঁদের আন্দোলন আরও জোরদার করেছেন।

গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর উপত্যকাটিতে দুই লাখের বেশি ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছেন। উপত্যকাজুড়ে এখন দুর্ভিক্ষের অবস্থা শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বিষয়টিকে ‘যুদ্ধে সহায়তার শামিল’ হিসেবে দেখছেন অধিকারকর্মীরা।

লেখক ও অধিকারকর্মী জুকিসওয়া ওয়ানার বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার অনেকে ভেবেছিলেন, দেশটি ২০২৩ সালের শেষ দিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করার ফলে এ যুদ্ধের দ্রুত অবসান হবে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর পূর্ণ সমর্থন নিয়ে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে গেছে।

ওয়ানার বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে এ গণহত্যা বন্ধে চাপ দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু নাগরিক হিসেবে আমরা আমাদের সরকারের কাছে অন্তত দাবি জানাতে পারি যে দক্ষিণ আফ্রিকা একটি অস্বাভাবিক ও গণহত্যাকারী সরকারের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে পারে না।’

গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর শুধু বলিভিয়া ও বেলিজ ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।

বাহরাইন, চাদ, জর্ডান ও তুরস্ক—মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশগুলো বিভিন্ন সময় তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করলেও এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১৮ সালের পর থেকে কোনো ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত নেই। তবে সেখানকার অধিকারকর্মীরা বলছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

২০২৩ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্টে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রস্তাব পাস হলেও দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সরকার এখনো তা কার্যকর করেনি। এ নিয়ে দেশটির জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ওয়ানার বলেন, ‘কিছু দেশ কোনো আড়ম্বর ছাড়াই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, যা আমরা করতে পারিনি।’

চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন (পিএসসি) নামের একটি সংগঠন এক পিটিশন তৈরি করেছে। এতে ইসরায়েলি দূতাবাস বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। পিটিশনে কয়েক হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেছেন।

পিটিশনে বলা হয়েছে, ‘আপনারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যা মামলা দায়ের করেছেন। অর্থাৎ আপনারা স্বীকার করেছেন যে ইসরায়েল গণহত্যা করছে। তবে কীভাবে আমরা সেই গণহত্যাকারী রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বহাল রাখতে পারি?’

গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ ও পশ্চিম তীরে নৃশংস দখলদারির বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে ছোট ছোট প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে।

চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অধিকারকর্মীরা জড়ো হন। কারণ, খবর পাওয়া যায় যে একটি জাহাজ দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে ইসরায়েলের উদ্দেশে যাচ্ছে। জাহাজে এমন মালামাল আছে, যা হয়তো গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে।

স্থানীয় অধিকারকর্মীরা দক্ষিণ আফ্রিকার বিডিএস (বর্জন, প্রত্যাহার ও নিষেধাজ্ঞা) জোটের মাধ্যমে আরও জানতে পারে যে ভারতীয় শহর চেন্নাই থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজটি ‘বিপজ্জনক পণ্য’ বহন করছে। ভারত এর আগে ইসরায়েলে ড্রোন, বিস্ফোরক ও যন্ত্রাংশ পাঠিয়েছে। ডারবানকে আরেকটি গাজা হয়ে ওঠা প্রতিরোধে তাঁরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

খবর পেয়ে শত শত মানুষ অনলাইনে সক্রিয় হন এবং পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে জাহাজটিতে তল্লাশি করার দাবি জানান। পরে পুলিশ জানায়, জাহাজে মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যবহৃত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় লোকজন এ সাড়া ও সতর্কতার প্রশংসা করেন।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha